দশ বছরেও অগ্রগতি নেই কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পুনর্বাসন প্রকল্পে!
নিজস্ব প্রতিবেদক :: রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পে গতি নেই বললেই চলে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হলেও ৭৫ ভাগ কাজ এখনও বাকি রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ ফের বাড়ানো হলেও কাজের অগ্রগতি এখনও ২৫ শতাংশেই থমকে আছে। অর্থাৎ, গত ১২ মাসে অগ্রগতি শূন্য। সব মিলিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হলেও কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। এমন পরিস্থিতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতের কালিন্দি রেলনির্মাণ কোম্পানি সুষ্ঠুভাবে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ার জন্য রেলওয়ে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর চালু হয় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি। বাজেট স্বল্পতায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় একসময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০০২ সালের ৭ জুলাই এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পণ্য পরিবহন এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ২০১০ সালে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার বন্ধ লাইনটি চালুর উদ্যোগ নেয়। ২০১১ সালে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। অনুমোদিত প্রকল্প পরে সংশোধন করে ৫৪৪ কোটি টাকা করা হয়। প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে রেলপথটি পুনর্বাসনের জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আর চুক্তির মেয়াদ কাজ শুরুর তারিখ থেকে ২৪ মাস। ২০১৮ সালে প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় দুই বছর, যা শেষ হয় ২০২০ সালের মে মাসে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও তখন কাজ হয় মাত্র ১৭ শতাংশ। এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফায় মোট দুই বছর বাড়ানো হলেও কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। সবশেষ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও গত ১২ মাসে কাজের অগ্রগতি এখনও ২৫ শতাংশেই আটকে আছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রেলপথ চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে।
কাজে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে এই প্রকল্প তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, কাজে গতি নেই বললেই চলে। কারণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ভালো বলতে পারবে।
অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতের কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সান্যালের দাবি, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা সহযোগিতা না করায় কাজের গতি কমে গেছে। বর্তমানে ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।