সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় চাষের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে-পরিবেশমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আরও অনেক দেশ বিভিন্ন অবস্থায় মুখোমুখি অবস্থান করছে। সেই কারণে আগামী বছর সারা বিশ্বে একটা খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য যতোটুকু সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের মাঝে বিনামূল্যে রোপা আমনের হালিচারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্যের যে চাহিদা আছে, তা যদি উৎপাদন করতে পারি, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। বিশ্বের কোনো দেশ থেকে আমদানি করতে চাই না। আমরা বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে চাই। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু মাঝখানে পিছিয়ে গেছি প্রাকৃতিকসহ নানা কারণে। মন্ত্রী আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের রোপা আমন আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোন দেন। তারা উঁচু এলাকার বিদ্যালয় মাঠে বীজতলা করতে চান বলে জানান। বন্যার্ত চাষীদের বাঁচাতে আমি তাতে মত দিই। ধারণা করেছিলাম হয়তো ৪-৫ বিঘায় বীজতলা করা হবে। কিন্তু কৃষি বিভাগ ৪৮ বিঘা জমিতে বীজতলা করে হালিচারা উৎপাদন করেছে। এই হালিচারা এখন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের দেওয়া হচ্ছে। সংকটকালে স্থানীয় কৃষি বিভাগের এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এ রকম একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। এটিকে অভিনন্দন জানাই। আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ধন্যবাদপত্র দেবো।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবল সরকার। উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিনের উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর প্রমুখ।
কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা উপজেলার ৯১০ জন কৃষকের মাঝে রোপা আমনের হালিচারা বিতরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক চাষীকে ১ বিঘা জমিতে আবাদের পরিমাণ হালিচারা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দাসেরবাজার ইউনিয়নের ১০০ জন কৃষকের মাঝে এই চারা বিতরণ করা হয়। বন্যায় বড়লেখায় ৩২৫ হেক্টর বোনা আমন ধান নষ্ট হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পোষাতে কৃষকদের জন্য বিকল্প এই উদ্যোগ। উপজেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর। আমন চাষী হচ্ছেন ১৩ হাজার ১৪০ জন। এই কার্যক্রমে উপজেলার মোট আমন চাষীর ৭ শতাংশ এবং বন্যাকবলিত এলাকার ১২ শতাংশ উপকৃত হবেন। ৯১০ জন কৃষক ৩৪টি বীজতলার হালিচারা রোপণ করতে পারবেন।
অপরদিকে পরিবেশমন্ত্রী দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্ণা এর উদ্বোধন এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞানসামগ্রি বিতরণ করেন।