বড়লেখায় পরকীয়ার জেরে অটোরিক্সা চালককে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ফখরুল ইসলামে (৫৫) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপি’র ইটাউরি গ্রামের সুনু মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়ির লিচু গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ফখরুলকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ লিচু গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনা আঁড়াল করতে তার পরিবার আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে নিহতের বোন সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে ফখরুলের স্ত্রী ও ছেলেসহ ৫জনের নাম উল্লেখ ও আরও দু’জনকে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় মামলা করেন। মামলার পর বুধবার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রথমে মেঝো ছেলেসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ এলাকা থেকে বিয়ানীবাজারের দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় দৌলতপুর বাজার সংলগ্ন কানলি ব্রিজ থেকে স্ত্রী দিলারা বেগমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-নিহত ফখরুল ইসলামের স্ত্রী দিলারা বেগম, ছেলে উজ্জল আহমদ, সোহাগ মিয়ার ছেলে সেলিম উদ্দিন, মৃত সুনু মিয়ার ছেলে মস্তাব উদ্দিন ও বকুল মিয়ার ছেলে কবির আহমদ। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ইটাউরি গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালক ফখরুল ইসলামের স্ত্রী দিলারা বেগম পরপুরুষ আসক্ত। এ নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীর সাথে ফখরুল ইসলামের ঝগড়া-ঝাটি হতো। সম্প্রতি ফখরুলের স্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া প্রতিবেশি মস্তাব উদ্দিনকে এক সের ধানের বীজ দেন। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয় ফখরুলের। এ সময় ছেলে উজ্জল আহমদ মায়ের পক্ষালম্বন করে ফখরুলকে মারতে উদ্যত হয়। ফখরুল বিষয়টি তার স্বজনদের জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ফখরুলে স্ত্রী, ছেলেসহ অন্য আসামীরা। এরপরই তারা ফখরুলকে হত্যার ছক আঁকে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ফখরুল তার স্বজনদের জানান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন আসামীরা ফখরুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গ্রামের সুনু মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়ির লিচু গাছে ঝুলিয়ে রাখে। মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বড়লেখা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান (পিপিএম) জানান, ফখরুলকে লিচু গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার হাত, পা, চোখ ও মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিলো। ফখরুলের স্বজনদের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী ও ছেলেসহ আরও কয়েকজন মিলে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশটি লিচু গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে স্ত্রী ও ছেলেসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রথমে মেঝো ছেলেসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী দিলারা বেগমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে শুক্রবার বিকেলে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, ফখরুল ইসলাম হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী, ছেলেসহ ৫ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নিহতের স্ত্রী দিলারা বেগম বিয়ানীবাজার পালিয়ে যাচ্ছিলেন। কানলি ব্রিজের ওপর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটনের জন্য আদালতে আসামীদের রিমান্ড চাওয়া হবে।