বগুড়ায় পুকুরের মাছসহ পানি উধাও!
বড়লেখা নিউজ ডেস্ক :: বগুড়ার কাহালু উপজেলায় পুরনো একটি পুকুর হঠাৎ পানি ও মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে পুকুরের মাঝে দেখা দিয়েছে সুড়ঙ্গ। ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই উধাও হয় পানি ও মাছ। এমন ঘটনায় হতবাক ও আতঙ্কিত গ্রামবাসী। ঘটনাটি উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের। এ নিয়ে পুরো জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। তবে বিষয়টি নিয়ে যেনো গুজব ছড়ানো না হয়, সেজন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে পুলিশ। শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের নূরুল ইসলাম (৭৮) প্রায় দুই যুগ ধরে নিজের ওই পুকুরে মাছ চাষ করে আসছেন। প্রায় ১৭ শতক আয়তনের ওই পুকুরে এবারও পাঁচ মণের মতো পোনা মাছ ছাড়া হয়েছিলো। সেই মাছসহ ৫ ফুট উচ্চতা সমান পানি নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর পুকুরের মাঝ বরাবর দেখা দিয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। গত মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
পুকুরের পানি হঠাৎ উধাও হয়েছে, এমন সংবাদে প্রতিদিন চারিদিক থেকে দল বেঁধে পুকুরটি দেখতে আসছেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। অনেকে কাঁদা মাড়িয়ে নিচে নেমে উঁকি দিয়ে দেখছেন সুড়ঙ্গের গভীরতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক আবু সাঈদ জানান, ভূগর্ভ থেকে কিছু উত্তোলন করলে ওই স্থান শূন্য হয়ে পড়ে। এ কারণে পানি বা মাটি দিয়ে উত্তোলনের স্থান পূরণ করে দিতে হয়। ওই পুকুরে সৃষ্ট গর্তকে ‘সিংক হোল’ বলা হয়। মাটির নিচের পানির সঙ্গে ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় ক্ষয় হয়। এখান থেকেই গর্তের সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট গর্ত অনেক গভীরও হতে পারে। সেই গর্তকেই বলে সিংক হোল বা বিশাল আয়তনের গর্ত।
পুকুরের মালিক নূরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এবারও প্রায় পাঁচ মণ (২০০ কেজি) মাছ ছেড়েছিলেন। কিছুদিন আগে হঠাৎই পুকুরের মাঝের দিকে পানিতে বুদবুদ উঠতে দেখেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে হয়তো এমনটি হচ্ছে ভেবেছিলেন তিনি। গত সোমবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের পানি কয়েক ফুট উঁচু হয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে। এ নিয়ে এলাকায় অনেকটা আতঙ্কও দেখা দেয়। আবার পানির এই লাফালাফি দেখতে এলাকার মানুষ ভীড়ও জমাতে শুরু করেন। সন্ধ্যার পর সেই অবস্থা কিছুটা কমে যায়।
নূরুল ইসলাম জানান, এরপর মঙ্গলবার পুকুরের মাঝখানে পাক খেতে খেতে (ঘূর্ণাবর্ত) পানি নামতে শুরু করে। নিমেষের মধ্যেই এক মানুষ সমান পানি নাই হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সামান্য কিছু মাছ ছাড়া বড় কোনো মাছের ছিঁটেফোটাও ছিলো না পুকুরের সিংহভাগ অংশে।
নূরুল ইসলামের ছেলে আব্দুল লতিফ জানান, এ ঘটনায় এলাকায় নানান গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন পুকুরপাড়ে। তিনি বলেন, এ ঘটনার কারণ রয়েছে। ১৮-২০ বছর আগে ওই পুকুর থেকে বালু তোলা হয়েছিলো। এ কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকেই পুকুরের পানি ওঠানামা করতে থাকে। এর মধ্যে ১৮ জুলাই বিকেলে পুকুরের পানি লাফিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করে, যা দেখে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পরদিন পুকুরের পানি ও মাছ উধাও হয়ে যায়। এছাড়া পুকুরে দেখা যায় এক বড় গর্ত। ওই গর্ত দিয়েই মাছ ও পানি উধাও হয়েছে।
বাগইল গ্রামের বাসিন্দা ও পাইকড় ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদ জানান, ওই পুকুর থেকে বালু তুলে বাড়ি করেছেন নূরুল ইসলাম। এ কারণে সেখানে মাটিধস হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে যেনো কেউ গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে কাহালু থানা পুলিশ। কাহালু থানা পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই সতর্কবার্তা দিয়েছে।
কাহালু থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন জানান, মাটির নিচে যেখানে বালু, পাথর, কার্বনেট শিলা, চুনাপাথর ইত্যাদি বেশি পরিমাণে রয়েছে সেখানে সিংক হোল বা বিশাল আয়তনের গর্ত সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। পুকুরে সৃষ্ট গর্ত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একই সঙ্গে এ বিষয়ে গুজব ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।