‘এক ঘণ্টা কারেন্ট থাকলে তিন ঘণ্টা থাকে না’ বড়লেখায় পল্লী বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ইমরান হোসাইন মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর শহরে টেইলার্সের ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার দিন-রাত মিলিয়ে লোডশেডিং এর কারণে যথাসময়ে কাস্টমারের পোষাক তৈরির কাজ শেষ করতে পারেননি। কাস্টমারের পোষাকের কাজ শেষ করতে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় দোকান খুলেন। ঘন্টা দেড়েক কাজ করার পর সকাল ১০টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে ঘণ্টা দেড়েক পর। এভাবেই দিনভর চলে বিদ্যুৎতের আসা-যাওয়ার খেলা। বুধবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি বিদ্যুৎ পেয়েছেন ৪ ঘন্টারও কম। তার দোকানটি মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা কার্যালয়ের ২ নম্বর ফিডারের আওতায় পড়েছে।
ইমরান হোসাইনের মতো এ রকম অভিযোগ করেছেন ওই ফিডারের আওতায় থাকা ব্যবসায়ী ও বাসা-বাড়ির শত শত বাসিন্দা। শুধু ২ নম্বর ফিডার নয় অন্যান্যগুলোতেও একই অবস্থা চলছে। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে মানুষেরা অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে বড়লেখা পৌর শহর ও গ্রামাঞ্চলের অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন, শহরে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ও গ্রামে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। তবে এই পরিস্থিতির জন্য মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহও মিলছে না। এ জন্যই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ী ইমরান হোসাইন বলেন, ‘দিনে এক ঘন্টা কারেন্ট দিলে তিন ঘন্টা থাকছে না। কাস্টমারের কাছ থেকে কাপড়ের অর্ডার নিয়ে সময় মতো কাজ করে দিতে পারছি না। এতে কাজও কমছে আমাদের। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবেল আহমদ বলেন, ‘বিদ্যুতের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় পানি তোলার মোটর নষ্ট হচ্ছে অনেকের।’
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জুনেদ রায়হান রিপন বলেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের এলাকায় প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। বুধবার অবশ্য সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাড়ে ৩ ঘন্টার মতো হয়েছে।’
পৌর শহরের হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুনলাম এক ঘন্টা লোডশেডিং হবে। কিন্তু এখন দেখছি ৫-৬ ঘন্টা করে হচ্ছে। তীব্র গরমে দোকানে ঠিকে থাকা দায়।’
তালিমপুর ইউনিয়নের গগড়া গ্রামের বাসিন্দা রিপন দাস, পানিধার গ্রামের ইমরান আহমদ, পারভেজ আহমদ, কেছরীগুল গ্রামের আব্দুল বাছিত প্রমুখ বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রায় ৫ ঘন্টা লোডশেডিং হয়েছে। একে তো বিদ্যুৎহীনতা তার উপর তীব্র গরমের কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের গল্লাসাংগন গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহমদ বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রায় ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। বুধবার সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৪ ঘন্টাও আমরা বিদ্যুৎ পাইনি। তীব্র গরমের মাঝে কষ্ট হচ্ছে।’
একই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজগ্রামের বাসিন্দা নীরব দাসও জানিয়েছেন, তারা গড়ে ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।
বিদ্যুৎ নিয়ে এ রকম দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের সাবুল আহমদ, বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মাছুম আহমদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুহেল রানা চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার আমাদের চাহিদা ছিলো ২০ মেঘাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি ৫ মেগাওয়াটের মতো। ফলে অর্ধেকেরও কম সরবরাহ পাচ্ছি। এমন হলে তো লোডশেডিং করতেই হবে।’