বন্যার্ত এলাকার গবাদিপশুকে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে একদল তরুণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে সবাই দাঁড়িয়েছে। তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু গবাদিপশুগুলোর কথা কেউ ভাবেনি। ওদের জন্য কেউ খাদ্য নিয়ে ছুটে যায়নি। তবে অবলা প্রাণিগুলোর কথা ভেবেছে বড়লেখা পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-২০১২ ব্যাচ ও বড়লেখা সরকারি কলেজের এইচএসসি-২০১৪’ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তারা বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোকে খাদ্য প্রদানসহ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ দিচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, দাসেরবাজার ও উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০০ গৃহপালিত গবাদিপশুকে খাদ্য ও ৯০০ গবাদিপশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিয়েছে। একই সাথে এসব এলাকার ২০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রি ও ৬০০ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ দিয়েছে। তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বড়লেখা উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ। প্রাণ বাঁচাতে মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেন। তবে অনেক মানুষ গবাদিপশু নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। উঁচু জায়গা খুঁজে গবাদিপশু নিয়ে রাখলেও খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তি সংগঠন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ালেও গবাদিপশুগুলোর কথা কেউ ভাবেনি। কোনো ধরণের খাদ্য সহায়তা দেয়নি। খাদ্যের অভাবে অনেকের গরু-ছাগল মারা গেছে। কেউ আবার বিক্রিও করে দিয়েছেন। এ বিষয়টি নাড়া দেয় বড়লেখা সরকারি কলেজের এইচএসসি-২০১৪ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফাহিমকে। তিনি বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোর জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। ফাহিম ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি তার সহপাঠি ‘এসএসসি-২০১২ ও এইচএসসি-২০১৪’ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জানান। তারা তার আহবানে সাড়া দেন। পরে সবাই মিলে মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত গবাদিপশুগুলোর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেন। এরপরই শুরু হয় টাকা সংগ্রহ। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সবাই মিলে এক লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকা দিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকার গৃহপালিত গবাদিপশুর জন্য ধানের গুড়া ও ভূষি এবং বিভিন্ন ধরণের ওষুধ কেনার পাশাপাশি মানুষের জন্য চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রি ও ওষুধ কেনা হয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ জুন থেকে তা বিতরণ শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
শাহরিয়ার ফাহিম বলেন, মানুষ তো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু অবলা প্রাণিগুলোর কথা কেউ ভাবেনি। খাদ্যের অভাবে অনেক জায়গায় দেখেছি গরু-ছাগল মারা গেছে। বিষয়টা আমাকে নাড়া দিয়েছে। ভাবলাম এই প্রাণিগুলোর জন্য কিছু করা যায় কি-না। পরে বিষয়টি ফেসবুক গ্রুপে আমার সহপাঠিদের সাথে শেয়ার করি। তারা সাড়া দেন। এরপর টাকা সংগ্রহ করে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুগুলোর জন্য খাদ্যসামগ্রি ও ওষুধ কিনে বন্যাকবলিত এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছি। একজন চিকিৎসক নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি রোগীদের দেখে ওষুধ দিয়েছেন। পাশাপাশি পশু চিকিৎসকও নিয়ে গিয়েছি। আমাদের এই কার্যক্রম চলমান আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবাই যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেভাবে যদি অবলা প্রাণিগুলোর জন্য কিছু করতেন। তাহলে এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে। শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই মহৎ কাজ করছে। তাদের যে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা পাশে থাকবো।