মুক্তিযোদ্ধার ব্যানারে অর্গানিক চা উৎপাদনকারী শাহবাজপুর চা বাগানের ভূমি জবরদখল!
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাাজপুর চা বাগানের ভূমি পুনরায় জবর দখল করে নিলো ভূমিদস্যুরা। এবার দখল হলো মুক্তিযোদ্ধার ব্যানারে। বাগান কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবরে অভিযোগ দিয়েছে।
দখল উচ্ছেদকল্পে গত ২৪ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুদাচ্ছির আলীর সভাপতিত্বে এক সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদ আহমদ বাবলু, বড়লেখা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধার ব্যানারে দখলদারদের পক্ষে মানিক মিয়াসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাগান কর্তৃপক্ষ, থানা পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১৮ জুন দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি’র বোবারথল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়ার নেতৃত্বে আব্দুল আজিজ, আরমুজ আলী, নিয়াজ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, কয়েছ মিয়া, আলী হোসেন, সালেক মিয়া, জাকির মিয়া, ফুরকান মিয়া, কামরুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিনসহ আরও ২৫/৩০ জনের ভূমিখেকো চক্র বাগানের পাল্লাথল ডিভিশনের প্রায় ১০০ একর জমি দখল করে নেয়। বাগানপক্ষ দখলে বাঁধা দিলে দখলবাজরা অস্ত্র উঁচিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। অবৈধ দখলদাররা শাহবাজপুর চা বাগানের ৭০১, ৭০৩, ৭০৫, ৬০২ ও ৬০৪ দাগের প্রায় সাড়ে ৫০০ একর টিলাভূমি দখল করে নেয়। চা বাগানের শত শত ছায়াবৃক্ষ ও প্রায় ১০ হাজার চা গাছ কর্তন করে। বাগানের জমি দখলে নিয়ে অবৈধ দখলদাররা সেখানে ১৯৭১-চেতনায় সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, রাসেল স্কোয়ার এর নাম দিয়ে দখল পাকাপোক্ত করার কাজে লিপ্ত। দখলে নিয়ে তারা সেখানে শতাধিক অস্থায়ী ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেছে।
দখলবাজদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে গত ২৪ জুন উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইউএনও কার্যালয়ে এক সমঝতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দখলদারদের ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়ে ভূমি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তবে দখলদারদের একটি অংশ দখল ছেড়ে গেলেও মানিক মিয়ার নেতৃত্বাধীন দখলবাজরা দখল ছেড়ে যায়নি। এদিকে অতি সম্প্রতি উপজেলা আইন-শৃঙ্ক্ষলা কমিটির সভায়ও দখল উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদ অভিযান সম্ভব হয়ে উঠেনি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরও একবার অর্গানিক চা উৎপাদনকারী ও রপ্তানিমুখী এ বাগানটির অংশবিশেষ দখল করে অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছিলো। এ অবৈধ দখল নিয়ে দৈনিক উত্তরপূর্বসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের হস্তক্ষেপে বাগানটি তখন দখলমুক্ত হয়। দখলমুক্ত হতে এবারও কি তাই হবে?
এদিকে একাধিকবার ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ পরিদর্শন করেছে। দখলদাররা সেখানে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করছে। শুক্রবার (১৬ জুলাই) বিকেলে থানা পুলিশের একটি দল সেখানে পরিদর্শন করতে গেলে দখলদাররা পুলিশের সাথে উত্যপ্ত বাক্য বিনিময় করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে।
শাহবাজপুর চা বাগানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আলী আহমদ জানান, আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। এভাবে যদি শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল হতে থাকে আর সুষ্ঠু বিচার না হয় তবে ব্যবসায়ীরা চা শিল্পে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন জানান, সরকার কর্তৃক কোনো জায়গা বাগানের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধা সেখানে যা করছেন তা তার ব্যক্তিগত। আমরা তার পক্ষে নই। এ ধরণের কাজ কেউ করে থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, অবৈধ ঘরগুলো আমরা উচ্ছেদ করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, বাগানের ভেতরে কিছু সরকারি খাস জায়গা রয়েছে যেখানে মুক্তিযোদ্ধার ব্যানারে অবৈধ ঘর বানিয়ে দখল করেছে। কিছু ঘর তারা তুলে নিয়েছে। আর কিছু ঘর এখনও দখলে রয়েছে। বিষয়টি থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এরপরেও না হলে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।