ফল নিরাপদ করতে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন কতদূর?
বড়লেখা নিউজ ডেস্ক :: দেশের বাগানগুলোতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার রোধে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে পুলিশকে নজরদারি করতে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই বছর দেশীয় মৌসুমি ফল আমে ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং কীভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশ ও র্যাবকে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন আদালত। এছাড়া স্থলবন্দরগুলো দিয়ে যাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট স্থাপন করতে বলেন হাইকোর্ট।
এর আগে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’র পক্ষে মনজিল মোরসেদের করা এক রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট সাত দফা নির্দেশনা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এসব নির্দেশনা আসে উচ্চ আদালত থেকে। কিন্তু করোনার কারণে ওই রিটের বিষয়ে আর শুনানি হয়নি। সর্বশেষ কোনো প্রতিবেদনও আদালতে আসেনি।
বিদেশ থেকে আমদানি করা ফলে কেমিক্যাল পরীক্ষা করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একটি পরীক্ষাগার তৈরি করা হয়েছে। তবে সেটিরও কোনো হালনাগাদ তথ্য আদালতে নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবিরা। এছাড়া ভারত থেকে আসা ফল পরীক্ষার জন্য বেনাপোলে একটি পরীক্ষাগার থাকলেও সেখানে উন্নত ব্যবস্থা নেই।
আইনজীবি মনজিল মোরসেদ এ বিষয়ে বলেন, বিদেশ থেকে ফল আসার পর মান পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে একটি পরীক্ষাগার করা হয়েছে। এরপর বেনাপোল দিয়ে আমদানি করা ফল পরীক্ষার জন্য আমরা কোর্টে গেলাম। হাইকোর্ট থেকেও নির্দেশনা আসলো। সবকিছু চূড়ান্ত ভাবে এগিয়েছে। অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছিলো। এর মধ্যে করোনা চলে আসলো। পরে এখন আর কোনো অগ্রগতি নেই। মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের আদেশ তো আছেই। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে অনেকটাই সুবিধা হবে মানুষের।
তখন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালন করা (বর্তমানে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল) ব্যারিস্টার মো. আব্দুল্লাহ আল মহামুদ বাশার বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প চলমান আছে। এই কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে দেশে রাসায়নিক টেস্টগুলো বিশেষ করে খাবারের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। কিন্তু মোংলা, বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়া যে বন্দর এবং শুল্ক স্টেশনগুলো রয়েছে, সেগুলোতে কোনো রাসায়নিক পরীক্ষাগার নেই। তিনি আরও বলেন, যদি সেখানে টেস্ট না করা যায় তাহলে দেশে আসার পর ফল দেশের ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে চলে যায়। এটার মান নিয়ন্ত্রণে পরিদর্শক রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। কিন্তু তাদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণ আছে কি-না সেটিও একটি বিষয়। আবার তারা বন্দরে কাস্টমস অথরিটি ছাড়া ওই ফলের বা পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। ফলে তাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ টেস্টিং ল্যাব দরকার।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবি আরও বলেন, আমরা আপাতত চেয়েছিলাম বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন থেকে (বিএসটিআই) কিছু জনবল দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা সেটি করে উঠতে পারিনি। কারণ এখানে বিএসটিআই’র লোকবলের স্বল্পতা ছিলো। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কীটনাশক পরীক্ষাগার হওয়া দরকার। সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থাও নিয়েছে, শুরু হয়েছে। অগ্রগতি আমাদের জানতে হবে। সেটি চলমান আছে। সরকার এ ব্যাপারে অবশ্যই সজাগ আছে, ব্যবস্থাও হচ্ছে । আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সবই সামনে আসবে। এতে ব্যবসায়ী ও জনগণ উপকৃত হবেন।
নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করা লিগ্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ’র পক্ষে রিটকারী আইনজীবি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর বলেন, সম্পূর্ণ একটি বিধিমালা আছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি আইন আছে। নিরাপদ খাদ্য (পিওর ফুড অ্যাক্ট-২০১৩) আইন হওয়ার পরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু জনবল ও ল্যাবরেটরি অপর্যাপ্ততার কারণে নিরাপদ খাদ্যের আইনটি এখন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
এ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, মৌসুমি ফল অনেকটাই ক্যামিকেলমুক্ত ও নিরাপদ। তবে সরকারের মনিটরিং অবস্থা খুব একটা ভালো না। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে আসছে। আদালতের আদেশের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের যে নিজস্ব আইন রয়েছে সে আলোকে রেগুলার বাজার মনিটরিং করছে। বিশেষ করে খাদ্যের মধ্যে মৌসুমি ফলে রাসায়নিক মেশানো হয় কি-না সেটিও মনিটরিং করা হয়। তিনি আরও জানান, এছাড়া দেশের বাইরে থেকে আসা ফলের মান দেখার জন্য মেশিনারি রয়েছে। আরও ভালো মানের উন্নত মেশিনারি যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই আইনজীবি বলেন, আমাদের যে ইন্টারনাল মার্কেটগুলো, সেগুলো সবসময় মনিটরিং করা যাচ্ছে না। সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা উচিত। এ ব্যাপারে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আরও বেশি কাজ করার সুযোগ আছে।