বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, সীমাহীন দুর্ভোগে লোকজন, নেই ঈদ আনন্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার কোনো উন্নতি হয়নি। উপরন্তু বুধবার (০৬ জুলাই) ভোররাত থেকে শুরু হওয়া দিনভর বৃষ্টির কারণে সব জায়গায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। গত ১৯ দিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগে বানভাসী লোকজন। উপজেলার ১টি পৌরসভার একাংশ, ১০ ইউনিয়নের ৫টির শতভাগ ও ৫ ইউনিয়নের আংশিক এলাকা এখনও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। পৌরসভার কিছু এলাকায় সামান্য পানি কমলেও রাস্তাঘাট চলাচল ও বসতবাড়ি বসবাস উপযোগী হয়নি। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখলেও দূরবর্তী প্রত্যন্ত অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি-এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী লোকজনের। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এবার ঈদ আনন্দ নেই হাওরপারের লোকজনের মাঝে। একই অবস্থা বন্যাকবলিত সবক’টি এলাকায়।
সরেজমিনে উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সুজানগর, বর্ণি ও তালিমপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্স এবং বেশ কয়েকটি হাটবাজারে ১ থেকে ৩ ফুট পানি থাকতে দেখা গেছে। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে এসব ইউনিয়ন অফিসের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের আম্বিয়া বেগম জানান, কাঁচা ঘরে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনোমতে বসবাস করতেন। বন্যায় ঘর-দরজা সব ভেঙ্গে এখন তিনি নিঃস্ব। একবার ত্রাণ পেলে ২-৩ বেলা খেতে পারেন। পেট বাঁচাতে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কাজিরবন্দ ছালিয়া গ্রামের আজিজুন নেছা জানান, ঘরে কোমর পানি। না পারছেন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে না পারছেন বাড়িতে থাকতে। গত তিন সপ্তাহ ধরে এক দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। এখনও তিনি সরকারি কোনো ত্রাণ পাননি। বিভিন্ন ব্যক্তি কিছু খাদ্যসামগ্রি দিয়ে গেছেন। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন একই গ্রামের দিনমজুর আশুক মিয়া। বন্যায় ফসলি জমি, বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট সব তলিয়ে যাওয়ায় কোনো কাজকর্ম নেই। বসতঘরে কোমর পানি। ধসে পড়েছে ঘরের বেড়া। ঘরের ভেতর কচুরিপানার স্তুপে বসবাস করছেন। কেউ ত্রাণ নিয়ে আসলে পেটে খাবার পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, বন্যায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়লেখা। উপজেলার অন্তত তিনশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার শুরুতেই বন্যাদুর্গতদের জন্য ২১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আরও ২৯টিসহ মোট ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। শুরু থেকেই আশ্রয় কেন্দ্র এবং বসতবাড়িতে পানিবন্দী থাকা মানুষদের মাঝে খাদ্যসামগ্রি বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ইতোমধ্যে ১৮৫ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। জিআর ক্যাশ ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে পানিবন্দীদের মধ্যে শুকনো খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যসামগ্রি বিতরণ করা হয়। এছাড়া শিশুখাদ্যের ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ৩ লাখ টাকা এবং ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১২ হাজার প্যাকেট ডানো গুঁড়ো দুধ মজুদ রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন সবাই বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে কারণে বন্যার্তদের খাদ্যের সংকট তৈরি হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। এরপরও দুর্গত কারো ত্রাণ না পাওয়ার খবর পেলেই তিনি দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছেন।