বড়লেখায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দূরীকরণে নলকূপ উঁচু করে দিচ্ছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বন্যার পানিতে অধিকাংশ এলাকার নলকূপ তলিয়ে গেছে। এতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। তারা বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বন্যার পানি পান করার পাশপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারছেন। এতে অনেকে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নলকূপ উঁচুকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ২০টি নলকূপ উঁচু করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১২টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮টি বাড়ি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট নলকূপগুলো উঁচু করা হবে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকি হাওরে সৃষ্ট বন্যায় বড়লেখা উপজেলার অন্তত ৩০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব এলাকার নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকে বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বন্যার পানি পান করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম করছেন। ফলে তারা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টরা উপজেলার বর্ণি, তালিমপুর, সুজানগর, নিজবাহাদুরপুর, বড়লেখা সদর ইউনিয়নে ১২টি আর্শ্রয় কেন্দ্র ও ৮টি বাড়ির নলকূপ উঁচু করে দিয়েছেন। নলকূপ উঁচুকরণ কাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জামান।
সরেজমিন দেখা গেছে, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বর্ণি আদর্শ উচ্চ বিদল্যায়, ফবিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, এম মুন্তাজিম আলী কলেজ, টেকাহালি উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাতুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছোটলেখা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের নলকূপ উঁচু করা হয়েছে। এছাড়া হাওরপারের হাল্লা গ্রামের আব্দুল মতলিব ও মুর্শিবাদকুরা গ্রামের দফতর আলীর বাড়ির নলকূপ উচুঁ করা হয়েছে। এসব নলকূপ থেকে মানুষজন পানি সংগ্রহ করছেন।
হাল্লা গ্রামের আব্দুল মতলিব বলেন, বন্যার পানিতে বাড়ির নলকূপ তলিয়ে গিয়েছিলো। এতে আমাদের বিশুদ্ধ পানির জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে বন্যার পানি দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারতে হয়েছে। এখন আমার নলকূপ থেকে বিশুদ্ধ পানি উঠাতে পারছি। কারণ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আমার নলকূপটি উঁচু করে দিয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। নলকূপও ডুবে গেছে। বাড়িতে টিকতে না পেরে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। আশ্রয় কেন্দ্রের চারদিকেও পানি। এখানকার নলকূপগুলো ডুবে গিয়েছিলো। প্রথমে পানির জন্য কষ্ট করতে হয়েছে। পরে সংশ্লিষ্টরা নলকূপ উঁচু করে দিয়েছেন। এখন তারা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন। এতে তাদের বিশুদ্ধ পানির সংকটও দূর হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন জানান, বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে বন্যাকবলিত এলাকার ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি ৮টি বাড়ির নলকূপের প্লাটফর্ম উঁচুকরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো উঁচু করা হবে। এছাড়া আমরা এই পর্যন্ত ২৩ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। পাশাপাশি ৫০টি পানি রাখার পাত্র (জারিকেন) বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।