হাকালুকি হাওর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষজন
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে মারাত্মক আকারে। ভুক্তভোগী মানুষজন এ রোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। একই অবস্থা পৌর এলাকা থেকে শুরু করে বন্যাকবলিত ৭টি ইউনিয়নে। হাওরপারের পশ্চিম গগড়া গ্রামের বাসিন্দা অপর্ণা রাণী দাসের বাড়ির আঙিনায় ও রান্নাঘরে বন্যার পানি উঠেছে। পানি মাড়িয়ে তিনি বাড়ির কাজকর্ম করছেন। এখন তার পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হতে শুরু করেছে।
একই গ্রামের ভ্যানচালক অনন্ত দাসের ঘরে ও বাড়ির আশপাশে বন্যার পানি উঠেছে। পানি মাড়িয়ে তিনি চলাচল করছেন। তার পায়ে গুটি বসন্তের মতো রোগ হয়েছে। এই দাগ কীভাবে হলো তার কারণ জানতে চাইলে অনন্ত বলেন, বন্যার পানিতে সবকিছু ডুবে গেছে। পানিতে পচা দুর্গন্ধ। পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। গায়ে পানি লাগলে চুলকায়। আর বসন্তের মতোও দাগ পানি লাগায় হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো ঔষধ পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ঔষধ এখনও পাননি তিনি।
শুধু অর্পণা রাণী কিংবা অনন্ত দাস নয়, তাদের মতো উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকার অনেক মানুষ এখন পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এলাকার মানুষ কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিকেল টিম বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিপাত না হলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরে আকস্মিকভাবে বন্যা দেখা দেয়। এতে বড়লেখা উপজেলার অন্তত ৩০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরে টিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে গেছেন। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। বন্যার পানিতে এসব এলাকায় নলকূপ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকে বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বন্যার পানিতে গোসল করছেন, পান করছেন। ফলে তারা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ও কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পর থেকে তাদের কারও জ্বর উঠেছে। কারও পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। কারও আবার পায়ে গুটি বসন্তের মতো রোগ হয়েছে।
তালিমপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য গগড়া গ্রামের বাসিন্দা সুজিত দাস বলেন, বন্যায় তাদের এলাকা তলিয়ে গেছে। তাদের ঘরে পানি উঠেছে। তারা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। পানি পায়ে লেগে তার পায়ে বসন্তের মতো দাগ হয়েছে। তাতে খুব চুলকায়। তিনি বলেন, শুধু যে আমার এই রোগ হয়েছে তা নয়, এলাকার অনেকে আছেন তাদের কারও পা ঘা হচ্ছে। কারও শরীরের বসন্তের মতো দাগ হচ্ছে। কেউ কেউ ডায়রিয়ায়ও ভোগছেন।
বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রসহ ১৫টি নলকূপের প্লাটফর্ম উচুকরণ করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রয়েছে। যেখানে দরকার সেখানেই বিতরণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে। পানিবাহিত রোগের ওষুধের জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ কিছুটা এসেছে।