বড়লেখায় ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের মিথ্যা নাটক সাজিয়েও রক্ষা হলো না
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাত মামলায় দোকান কর্মচারী অনুপ দত্ত যিশু ও তার সহযোগি স্বপন দত্তের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত দুইজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সংশোধনমূলক কার্যক্রম সম্পন্নের শর্তে ব্যতিক্রমী রায় ঘোষণা করেছেন। বুধবার (২২ জুন) বিকেলে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক এ রায় দেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর বিকেলে হাজীগঞ্জ বাজারের আয়শা ট্রেডার্সের কর্মচারী অনুপ দত্ত যিশু স্থানীয় ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিকের ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ছিনতাইয়ের মিথ্যা নাটক সাজায়। সে দোকান মালিককে তখন জানায়, মধ্যবাজারস্থ ফৈয়াজ আলীর দোকানের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাত ছিনতাইকারীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে সাথে থাকা টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। আহত দোকান কর্মচারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত দোকান কর্মচারীর কথা বিশ্বাস করে এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমান অজ্ঞাত ছিনতাইকারীদের নামে থানায় মামলায় করেন। থানা পুলিশের এসআই রকিব মোহাম্মদের তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। প্রমাণ মিলে দোকান কর্মচারীই ছিনতাইয়ের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাত করেছে। মামলার দুই নম্বর আসামীর বসতঘরের বাথরুম থেকে তদন্ত কর্মকর্তা ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। এরপর ২০২০ সালের ৬ মার্চ দোকান কর্মচারী অনুপ দত্ত যিশু ও তার সহযোগি স্বপন দত্তের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে আদালত ও বাদীর কাছে ক্ষমা চায় এবং সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দানের প্রার্থনা জানায়।
সাক্ষ্য প্রমাণে আদালত অভিযুক্ত অনুপম দত্ত যিশুকে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্থক্রমে ৪০৮ ধারায় ৫ বছরের এবং ৪২০ ধারায় ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সহযোগি আসামী স্বপন দত্তকে ৪০৮ ধারায় ৪ বছরের ও ৪২০ ধারায় ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্থ করা হলেও দি প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স-১৯৬০ এর ৫ ধারার আলোকে আসামীদের বয়স, সাংসারিক অবস্থা, পেশার ধরণ, অপরাধের মাত্রা এবং পূর্বের ইতিহাস বিবেচনায় সাজা প্রদান না করে রায়ের সাথে সংযুক্ত শর্তাদির আলোকে বিজ্ঞ আদালত প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ১নং আসামীকে ১ বছর ৬ মাসের এবং ২নং আসামীকে ১ বছরের সংশোধনমূলক কার্যক্রম সম্পন্নের আদেশ জারি করেন। রায়ে আদালত প্রবেশনকালীন আসামীদের প্রবেশন কর্মকর্তার নির্দেশিত স্থানে রাস্তার দু’পাশে নিজ খরচে ১৫টি করে মোট ৪৫টি অর্জুন, নিম ও কৃষ্ণচুড়ার চারা রোপণ করার আদেশ দিয়েছেন।
বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারি ইকরাম হোসেন দুই আসামীর বিরুদ্ধে প্রবেশন রায় প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করেন।