বড়লেখায় ৪১ আশ্রয় কেন্দ্রে খাদ্য ও নিরাপত্তা প্রদানের উদ্যোগ
হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশঃ অবনতি ঘটছে। বানভাসীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন আরওা ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মোট ৪১টি আশ্রয় কেন্দ্রের দুর্গত মানুষের খাদ্য ও নিরাপত্তা প্রদানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (২০ জুন) রাতে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরির্দশন ও বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে মঙ্গলবার বিকেলে নিজ নির্বাচনী এলাকায় দুই দিনের সফরে এসেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি।
জানা গেছে, গত চার দিন ধরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ০১টি পৌরসভার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রথমে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও দুর্গতদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন রোববার আরও ২০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দিয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সুজানগর, বর্ণি, তালিমপুর ইউনিয়নের শতভাগ এবং দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর ও উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ এলাকায় না চলছে যানবাহন, না চলছে নৌকা-এমন অবস্থায় দুর্গতের মাঝে ত্রাণ পৌঁছিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে উপজেলার প্রত্যেক আশ্রয় কেন্দ্রে আগত দুর্গতদের খাদ্য ও নিরাপত্তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া যারা বাড়িঘরে পানিবন্দী রয়েছেন তারাও যেনো অভুক্ত না থাকে সে ব্যাপারে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার রাতে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের জন্য তাৎক্ষণিক ২৯ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ মিলেছে। প্রকৃত দুর্গতদের তালিকা করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট দুলাল হোসেন, বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি প্রণয় কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম সুন্দর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ একেএম হেলাল উদ্দিন, পৌর মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ, বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, দক্ষিণভাগ ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন, সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম, দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন চক্রবর্ত্তী, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান পংকি মাস্টার, সুজানগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমরুল ইসলাম লালসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ।
অপরদিকে মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুরে উপজেলার দক্ষিণভাগ, সুজানগর ও দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও বর্ণি ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গতদের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ করেন ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম সুন্দর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন, এনাম উদ্দিন, বদরুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন প্রমুখ।