মৌলভীবাজারে প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে নদীর পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজার জেলার সবগুলো নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। জেলার কমলগঞ্জ ছাড়া অপর ৬টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এতে সদর উপজেলার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়নসহ ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ও ৭ উপজেলায় ২১০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু নদীর পানি বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছেন নদীতীরের কয়েক লাখ বাসিন্দা। জেলার কুশিয়ারা ও ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার সাত উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মৌলভীবাজার শহরের মাইজপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৩টি ঘর তলিয়ে গেছে। চরম বিপাকে পড়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বাইরে এই ঘরগুলো নির্মাণ করায় বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে। ঘরে পানি ওঠার পরেও আশ্রয়ের জন্য আমাদের কোনো জায়গা দেওয়া হয়নি।
মাইজপাড়া এলাকার বদরুল ইসলাম বলেন, নদীর তীরে এভাবে আশ্রয়ণের ঘর তৈরি ঠিক হয়নি। যে কারণে আজ অসহায় মানুষগুলো সমস্যায় পড়েছে।
জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাঘাটা নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, নতুনবস্তি ও হামরকোণা গ্রামের কুশিয়ারা নদী তীররক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে স্থানীয় শেরপুর বাজারসহ আরও ৪টি গ্রামের অন্তত হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে সদর উপজেলার মনুমুখ, আখাইলকুঁড়া, একাটুনা, কনকপুর, চাঁদনীঘাটের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার অসংখ্য গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। ৬০টি মেডিকেল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় কর্মরত রয়েছে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান,
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান খান বলেন, মনু নদীর পানি বিকেল থেকে বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানিয়েছেন, পুরো জেলায় ৪২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৪০ হাজার পরিবার। জেলাজুড়ে ১০১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চাঁদনীঘাট পয়েন্টে সরেজমিনে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। তিনি আরও জানান, কমলগঞ্জ ছাড়া মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। বন্যাকবলিতদের সাহায্যার্থে বরাদ্দ দেওয়া চাল ও শুকনো খাবার এরই মধ্যে উপজেলা দপ্তরের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছে গেছে।