পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন, ৪ ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর ও মনু রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী চক-কবিরাজ পাহাড়ি এলাকায় সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে। এ ঘটনার ৪ ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট কাজ করে প্রায় ২ ঘণ্টা পর পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার (১১ জুন) বেলা পৌনে ১টায় ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। প্রায় ৪ ঘণ্টা সিলেটের সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করে। কিছুক্ষণ পর থেকেই ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তেলের ট্রাংকি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৪ কি.মি. অতিক্রম করার পর যাত্রীদের হাল্লা-চিৎকারে ট্রেনটি থামানো হয় চক-কবিরাজ এলাকায়। তখন যাত্রীরা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্থানীয় লোক ও যাত্রীদের সহযোগিতায় ট্রেনের কর্তৃপক্ষ আগুন লাগা তিনটি বগি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ট্রেনের জেনারেটর বগি ও পার্শ্ববর্তী যাত্রীবাহী দু’টি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনার প্রায় ১ ঘণ্টা পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কমলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পরে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে সর্বমোট ৭টি অগ্নিনির্বাপক দল গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ফাইটার ইফনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। এ ঘটনায় ট্রেনের ১৬ টি বগির মধ্যে তিনটি বগি ছাড়া কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় ট্রেনের যাত্রীরা নিজ নিজ খরচে সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছান।
খবর পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। জেলা প্রশাসক স্থানীয় লোকদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল হককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায় চাকার মধ্যে আগুন ও পরে পাওয়ার কারের ভেতর তেলের ট্রাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়। কমিটি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিন বলেন, ট্রেনটি বারোটা ৪৫ মিনিটে শমশেরনগর স্টেশন ছেড়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্ত:নগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লংলা স্টেশনে ও চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়ে। এই ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। আগুন পুরোদমে নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিকেল পৌনে ৫টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ফায়ার সার্ভিস এণ্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মৌলভীবাজারের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কি কারণে আগুন লেগেছে তা এখনও জানা যায়নি।
ঘটনাস্থল থেকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হককে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, রেলে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার পর রেলকর্মীরা তড়িঘড়ি করে নেমে পড়েন। রেলে ছিলো না আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা। যাত্রীদের উদ্ধারে প্রথমে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা।