ইংল্যান্ডে মানুষ এখন এক বেলা খাবার কমাতে বাধ্য হচ্ছেন-প্রধানমন্ত্রী
বড়লেখা নিউজ ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশেও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের মানুষ এখন এক বেলা খাবার কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে যতোটা সম্ভব পণ্যমূল্য কম রাখার চেষ্টা করছেন জানিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে।
রাজধানীর গুলিস্তানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার(০৭ জুন) বাঙালির মুক্তি সনদ ঐতিহাসিক ‘৬-দফা দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামীলীগের আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে দ্রব্যমূল্য অন্তত নিয়ন্ত্রণে যতোটুকু পারি রাখছি। প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। আমাদের রিজার্ভ যে ৪৮ বিলিয়নে তুলেছিলাম, সেই রিজার্ভের টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুতের জন্য, গ্যাসের জন্য, কৃষির জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কোনো দেশ কিন্তু করেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইংল্যান্ডের মানুষ যারা তিন বেলা খেতো, তারা এক বেলা খাবার বাদ দিয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবা না, সীমিত আকারে ব্যবহার করো। ভোজ্যতেল এক লিটারের বেশি কেউ কিনতে পারবে না। সুপার মার্কেট থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। ইউরোপের কোথাও কোথাও ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান যে অবস্থা, একদিকে করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে আজকে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, উন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতি…লন্ডনে, ইংল্যান্ডে ১০ ভাগে উঠে গেছে। আমেরিকায় যেখানে এক থেকে দেড় ভাগের বেশি মুদ্রাস্ফীতি থাকতো না, সেখানেও ১০ ভাগের ওপরে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।’
দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘তারপরও যদি কেউ গোলমাল করার চেষ্টা করে, তাহলে এ দেশটা যদি একেবারে স্থবির হয়ে যায়, সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে? তবে একটা কথা বলতে পারি, আমাদের গ্রামের মানুষের অবস্থা এখনও অনেক ভালো আছে। সেটা যেনো ভালো থাকে সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আহ্বান করছি এক ইঞ্চি জমিও যেনো অনাবাদি না থাকে। কারণ বিশ্বজুড়ে যেখানে খাদ্যের অভাব, যেখানে খাদ্যমন্দা, সেখানে আমাদের নিজের মাটি আছে, মানুষ আছে, আমাদের ফসল ফলাতে হবে। নিজেদের খাবারের ব্যবস্থাটা অন্তত আমরা নিজেরা করবো। এটাই হলো বাস্তব।’
২৫ জুন খুলে দেয়া হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাংলাদেশের অহংকারের প্রতীক হয়ে নির্মিত বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। ওইদিন সকাল ১০টায় সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে ধন্যবাদ, তাদের সমর্থন পেয়েছিলাম বলেই নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি।’
আওয়ামীলীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে বলতে গেলে আওয়ামীলীগ সরকার আসার পরই এ দেশে একটু স্থিতিশীলতা এসেছে। আজকে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, জেল-জুলুম যা-ই আমরা ভোগ করি, কিন্তু বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীলতা আমরা আনতে পেরেছি। তারপরেও তো প্রচেষ্টা বারবার, আমাদের সরকারকে উৎখাত করতে হবে।’
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জয় পেয়েছিলো বলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইতিহাসে এই প্রথম দীর্ঘ সময় একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নতিটা হয়েছে। আমি জনগণের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।’
ছয় দফা দিবসের আলোচনায় পাকিস্তান গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিমা শোষণের নানা দিক উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ছয় দফা প্রণয়ন করেন, বঙ্গবন্ধু নিজে এটা বলতেন, লিখতেন। হানিফ (অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) সেটা টাইপ করতেন। কাজেই ছয় দফার মূল প্রণেতা তিনি নিজেই এবং এটা শুধু একমাত্র মোহাম্মদ হানিফ জানতেন। কারণ তিনি সেটা ইংরেজি-বাংলা টাইপ করে ওনার (বঙ্গবন্ধু) হাতে দেন।’