নানা আয়োজনে পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-পরিবেশমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি বলেছেন, আগামী ৫ জুন নানা আয়োজনে পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন এবং একই সাথে ৫ জুন হতে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন হতে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২ এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) তথ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী এই তথ্য জানান। এই সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে অনলি ওয়ান আর্থ : লিভিং সাস্টেইনেবিলি ইন হারমনি উইথ নেচার’ যার ভাবানুবাদ “একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন”। তিনি বলেন, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ -প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’। আমাদের একমাত্র এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে, সব ধরণের প্রাণিকে বাঁচাতে হবে, অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, জনগণের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন অধিদপ্তর হতে এ সংক্রান্ত স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় গুরুত্বের সাথে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হবে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ দূষণের অন্যতন প্রধান কারণ শিল্প কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট দূষণ রোধকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তর সীমিত জনবল নিয়েও শিল্প কারখানাসমূহ নিয়মিত মনিটর করছে এবং দূষণকারী শিল্প কারখানাসমূহকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এদিকে ইটভাটা সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিজমির উর্বর মাটি রক্ষার লক্ষ্যে সরকার “ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) জারি করেছে। এই আইন বাস্তবায়ন ও পোড়ানো ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা করেছে। এছাড়াও বায়ুদূষণকারী অবৈধ কারখানা ও অপরিকল্পিত নির্মাণ কার্যক্রম, কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ও মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন অধিদপ্তর প্রায় ৭ হাজার ২২০ হেক্টর সমতল ভূমি ও শালবন পুনরুদ্ধার, ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি বন পুনরুদ্ধার, ৫০০ হেক্টর আগর বন, ১৫ হাজার কি.মি. স্ট্রীপ বাগান, ৫০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগানসহ অন্যান্য বাগান সৃজন করা হবে। এ পর্যন্ত সামাজিক বনায়নের আবর্তকাল উত্তীর্ণ গাছ আহরণ করে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৯৯৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৪১১ কোটি ৫২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা লভ্যাংশ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৯ হতে ২১ আর্থিক সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প এবং রাজস্ব বাজেটের আওতায় ম্যানগ্রোভসহ ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৭৮ হেক্টর ব্লক, ২৬ হাজার ৪৫৩ সিডলিং কি.মি. ষ্ট্রীপ বাগান সৃজন এবং বিক্রয় বিতরণের ১০ কোটি ৫৯ লক্ষ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে খুদেবার্তা প্রেরণ ও ওয়েলকাম টিউন সংযোজন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শ্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার, রাউন্ড টেবিল আলোচনা, পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম, পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পর্কিত বুকলেটের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রণয়ন ও প্রকাশ, ইটিপিবিহীন ও দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের জন্য সচেতনতামূলক সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে দখলকৃত বনভূমি রক্ষায় লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণসহ সকল প্রকার দূষণ নিয়ন্ত্রণেই সরকার কাজ করছে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র বা ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) অনলাইন ব্যবস্থাপনার আওতায় আসছে বলে তিনি জানান। নতুন বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।