শখের কবুতর পালনে স্বাবলম্বী বড়লেখার ফাহিম এখন বেকার যুবকদের মডেল
জালাল আহমদ :: পড়ালেখার পাশাপাশি ২০১২ সালে শাহরিয়ার ফাহিম শখের বসে দুই জোড়া কবুতর কিনে আনেন। এরপর সেগুলো লালন-পালন করেন। কয়েকদিন পর কবুতরগুলো ডিম দেয়। পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এরপর বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনের চিন্তা আসে ফাহিমের। বর্তমানে ফাহিমের খামারে ২০ জাতের কবুতর ও বিভিন্ন প্রজাতির ৮ জাতের ৭০০ পাখি রয়েছে। কবুতর পালনের পাশাপাশি ‘বার্ডস কেয়ার’ নামে তার একটি পাখির খাদ্যের দোকান রয়েছে। সেখানে পাখি বিক্রির পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখির ঔষুধও বিক্রি করেন। পাখি ও খাদ্য বিক্রি করে ফাহিম প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করছেন।
অবশ্য ফাহিমকে শুরতেই পরিবারের বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে সব বাঁধা ডিঙিয়ে তিনি আজ সফল। ফাহিমকে দেখেই উপজেলার অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। তারাও এখন কবুতর পালনে ঝুঁকছেন। ফাহিম বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা এলাকার মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে। তিনি ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। বড়লেখা সরকারি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক শেষ করেছেন। সরেজমিনে ফাহিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দ্বিতল বাড়ির ছাদের দুইপাশে টিনের ছাউনির ঘর। ঘরের চারপাশ কাঠ ও তারের নেট দিয়ে ঘেরা। খামারের ভেতর কবুতরের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে। পাখিদের ডাকে বাড়িটি সবসময় মুখরিত থাকে। ফাহিম পাখিগুলোকে খাবার দিচ্ছিলেন। যত্ন নিচ্ছিলেন।
ফাহিম জানান, তার খামারে বর্তমানে ২০ জাতের কবুতর ও বিভিন্ন প্রজাতির ৮ জাতের ৭০০ পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ফেনসি, রেসার, গিরিবাজ কবুতরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্য পাখিগুলোর মধ্যে বাজরিগর, ককাটিয়েল, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু পাখির চাহিদাও আছে। একজোড়া কবুতর ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা দাম। এর মধ্যে রেসার কবুতর সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ফাহিম ২০২০ ও ২০২১ সালে সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে কবুতর রেসে ঢাকা-ভৈরব থেকে ১৫০ কিলোমিটার আকাশ পথে রেসে অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন।
আলাপকালে ফাহিম বলেন, অনেক পরিশ্রম করে তিনি কবুতর খামারটি গড়েছেন। প্রথমে পরিবারের কেউ চাইতো না যে কবুতর পালন করি। কিন্তু এখন কেউ আর বাঁধা দেন না। তিনি বলেন, এখন আমাকে দেখে অনেকেই পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের অনেকে আমার কাছ থেকে পাখি নিচ্ছেন। বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পরিশ্রম করলে যে কেউ সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আমাদের সমাজের অনেকে আছেন যারা সবসময় চাকরির পেছনে ছুটছেন। তাদের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে ভালো কোনো কাজে লেগে থাকা। তাহলে সফলতা আসবেই।
পাথারিয়া গাংকুল মনসুরিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আইসিটি প্রভাষক পানিধার গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জীব সরকার বলেন, এক বছর ধরে আমি বাড়ির ছাদে কবুতর পালন শুরু করেছি। মূলত ফাহিমের খামার দেখে কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আর আমারও শখ ছিলো। যে কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে আমার কাছে ৩০-৩৫ জোড়া দেশি ও ফেন্সি কবুতর আছে। আমি ফাহিমের দোকান থেকে পাখির খাদ্য ক্রয় করে থাকি।
আর.কে লাইসিয়াম স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফসার হোসেন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি দীর্ঘদিন ধরে কবুতর পালন করছি। কবুতরের বিষয়ে আমাদের ধারণা কম ছিলো। কীভাবে এগুলো পালন করতে হবে। অসুস্থ হলে কীভাবে চিকিৎসা করাতে হবে। এসব পরামর্শ ফাহিম ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। এখনও পাচ্ছি। তার দোকান থেকে কবুতরের খাদ্য কিনে আনি।
বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কবুতর পালন করে ফাহিম স্বাবলম্বী হয়েছেন। ফাহিমের মতো এখনকার তরুণরা যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি এভাবে গবাদি পশু-পাখি পালন শুরু করে তাহলে দেশে বেকারত্ব কমবে। অপরাধ কমবে। দেশ এগিয়ে যাবে।