১০ লাখ টাকা আত্মসাত, প্রতারণা মামলায় বড়লেখার তাজ উদ্দিন কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ বাজারের ‘জামাল প্লাজা’র কথিত মালিক তাজ উদ্দিনকে অবশেষে ১০ লাখ টাকার প্রতারণা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার করমউল্লাহপুর গ্রামের মৃত আনর মিয়ার ছেলে নওশাদ মিয়ার প্রতারণা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রায় ৪ মাস পলাতক থাকার পর মঙ্গলবার (২৪ মে) মৌলভীবাজার সদর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন চাইতে হাজির হন তিনি। বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট ইমরান মিয়া লস্কর।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রমতে, উপজেলার দক্ষিণভাগ বাজারস্থ কাতার প্রবাসী জামাল উদ্দিনের মালিকানাধীন ‘জামাল প্লাজায়’ বসবাস করেন তারই ছোটভাই নানা অপকর্মের নায়ক তাজ উদ্দিন। বড়ভাইয়ের মালিকানাধীন ‘জামাল প্লাজা’ নিজের বলে চালিয়ে কখনও ভাড়া, সাব-লীজ এমনকি বিক্রয়ের কথা বলে বিভিন্ন সহজ-সরল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার করমউল্লাহপুর গ্রামের মৃত আনর মিয়ার ছেলে নওশাদ মিয়া ও হবিগঞ্জের তানজিম আহমদকে মাসিক ৬০ হাজার টাকা ভাড়ায় ১২ বছরের জন্য ২০ লাখ টাকা চুক্তিতে ‘জামাল প্লাজা’ ভাড়া দেন তাজ উদ্দিন। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাজ উদ্দিন চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে নওশাদ ও তানজিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। শর্ত অনুযায়ী টাকা পেয়েই জামাল প্লাজা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্ত টাকা গ্রহণ করেও ভুক্তভোগী নওশাদকে মার্কেটসহ জামাল প্লাজা বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করেন তাজ উদ্দিন। এরই মধ্যে অন্য কয়েকজনের সাথে জামাল প্লাজা ভাড়া ও বিক্রির পাঁয়তারা শুরু করলে ভুক্তভোগী নওশাদ তাজ উদ্দিনের ওপর চাপ দিতে থাকেন। আজ নয় কাল করে প্রায় দেড় বছর নওশাদতে ঘুরাতে থাকেন। একপর্যায়ে অগ্রিম টাকা গ্রহণ ও চুক্তিপত্রের কথা অস্বীকার করে তাজ উদ্দিন ও তার সহযোগিরা নওশাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালান।
অবশেষে ভুক্তভোগী তাজ উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ২০২১ সালের ০২ ফেব্রæয়ারি মৌলভীবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণা মামলা করেন। এই মামলায় তাজ উদ্দিনের সহযোগি জনৈক মোতাহির মিয়া ও রাহেলা সিদ্দিকাকেও আসামী করা হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) প্রেরণ করেন। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান আসামী তাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তাজ উদ্দিন তার আপন বড়ভাই কাতারপ্রবাসী হাজী জামাল উদ্দিনের দক্ষিণভাগ বাজারস্থ প্রায় দুই কোটি টাকার ‘জামাল প্লাজা’ ২য় তলা মার্কেটসহ ৩০ শতাংশ ভূমি জামাল উদ্দিন সেজে ২০১৮ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেন। বিল্ডিংয়ে ভাইয়ের নাম পরিবর্তন করে জামাল প্লাজার স্থলে তাজমহল নামকরণ করেন। জামাল উদ্দিনের কোটি টাকার বিল্ডিং আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হলে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসসহ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরবর্তীতে এই জাল দলিল দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মার্কেটের কিছু অংশ বিক্রির কথা বলে বায়নামা দলিল করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে থাকেন। যারা ক্রয় করার জন্য বায়নামার টাকা দিয়েছেন তারা দলিল তল্লাশি করতে গিয়ে জানতে পারেন তাজ উদ্দিন নামীয় দলিলটি জাল। তার হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীদের বিচার সালিশকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাজ উদ্দিনের দায়ের করা একাধিক মিথ্যা মামলা আদালতে খারিজ হয়েছে বলেও জানা গেছে।