বড়লেখার মাধবকুণ্ডে টিকটকারদের উৎপাতে অতিষ্ঠ দর্শনার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে কিশোর-তরুণ বয়সী টিকটকারদের উৎপাত বেড়েছে। টিকটিক ভিডিও তৈরি করতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে টিকটকাররা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় উঠছে। আর এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাদের পাহাড় চূড়ায় উঠার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে পর্যটক হয়রানি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। টিকটকারদের উৎপাতের মাধবকুণ্ডে ঘুরতে আসা পর্যটকরা রীতিমতো বিব্রত, নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। তবে পুলিশ বলছে, পর্যটকের নিরাপত্তায় তারা সবসময় তৎপর রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন আশপাশের জেলা-উপজেলার পাশপাশি দেশের নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসছেন মাধবকুণ্ডে। এই সুযোগে বড়লেখা ও আশপাশের উপজেলার উঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণ টিকটকাররা মাধবকুণ্ডে ঘুরতে আসছেন। তারা এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করছে। জলপ্রপাতের পানিতে গোসল করতে নামা নারী পর্যটকের ভিডিও ধারণ করছে। এতে পর্যটকদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। এছাড়া তারা টিকটিক ভিডিও তৈরি করতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড় চূড়ায় উঠছে। এদিকে গত শুক্রবার মাধবকুণ্ডে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটককে টিকটকাররা হয়রানি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে কুলাউড়া ও জুড়ী থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটককে কয়েকজন টিকটকার পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তারা পর্যটকদের মারধর করে। এ সময় স্থানীয়রা টিকটকারদের উত্তম-মধ্যম দিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখেন। অভিযুক্তরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপি’র চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন জানান, মাধবকুণ্ডে কুলাউড়া ও জুড়ী থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটককে টিকটকাররা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও পরে তাদের মারধর করা হয়। স্থানীয়রা তাদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। পরে ভবিষ্যতে এ রকম কাজ করবে না-মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাধবকুণ্ডে ঘুরতে আসা পর্যটক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মাধবকুণ্ডে ইদানিং যেভাবে টিকটকারদের উৎপাত বেড়েছে তাতে মাধবকুণ্ডের পরিবেশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এখানে ঘুরতে এসে দেখছি টিকটকাররা যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে। এই অবস্থায় নারী পর্যটকরা বিব্রতবোধ করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধবকুণ্ড এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন কিশোর-তরুণ টিকটকাররা এখানে এসে ভিডিও তৈরি করছে। তারা পর্যটকদের হয়রানি করছে। আপত্তিকর ভাষায় কথা বলছে। অনেকে প্রতিবাদ করেন। অনেকে আবার ভয়ে কথা বলেন না। তাদের উৎপাতে পর্যটকরা বিব্রত। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পরে আমাদের ওপর হামলা করবে। তাই আমরাও প্রতিবাদ করি না। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোনো এ্যাকশন নিচ্ছে না। তবে গত শুক্রবার কয়েকজন নারী পর্যটককে হয়রানির কারণে পুলিশের টনক নড়েছে।
মাধবকুণ্ডের ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই খায়রুল ইসলাম বলেন, পর্যটকরা যাতে কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আমরা সবসময় কাজ করছি। শুক্রবার পর্যটকদের সাথে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমি ডিউটিতে ছিলাম না। অন্য একজন ছিলেন। পরে শুনেছি বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আজকেও প্রতিদিনের মতো পর্যটকরা আসছেন। পরিবেশও ভালো। ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় চূড়ায় উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ উপরে উঠতে পারে না। যারা উঠার চেষ্টা করেন তাদের আমরা সতর্ক করছি।
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, ঈদের দিন থেকে এখানে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটছে। শুক্রবার র্যটকদের মধ্যে গায়ে ধাক্কা লাগা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পর্যটকের নিরাপত্তায় ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালতি হয়েছে।