দুই বছর পর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে পর্যটকের রেকর্ড ঢল
নিজস্ব প্রতিবেদক :: করোনার বিধি নিষেধের কারণে গেলো দুই বছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতিকন্যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে পর্যটকদের আনাগোনা ছিলো অনেকটাই কম। এতে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের চরম দুর্দিন গেছে। তবে এ চিত্র এখন পাল্টেছে। এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সকলের মুখে হাসি ফিরেছে। ঈদের দিন মঙ্গলবার (০৩ মে) থেকে শুক্রবার (০৬ মে) বিকেল পর্যন্ত মাধবকুণ্ডে এবার রেকর্ড ঢল নেমেছে পর্যটকের। এবার ১০ হাজারের অধিক পর্যটক প্রবেশ করেছেন বলে বনবিভাগ জানিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের দিন মঙ্গলবার মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসা বেশিরভাগই বড়লেখা ও আশপাশের উপজেলার। ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকারও দর্শনার্থী ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে আসেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে প্রবেশের আগে সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার যানজটের দীর্ঘ লাইন। সেখানে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। ইকোপার্ক এলাকায় পৌঁছার পর বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভীড়। বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবার হোটেলগুলোতেও বেশি ভীড়। জলপ্রপাত এলাকায় দল বেঁধে জলে নেমে হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাস করছিলেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ কেউ ঝরণার জলে সাঁতার কাটছিলেন। আবার অনেকে পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে অবিরাম ঝর্ণার জলপতনের দৃশ্য ও আশপাশের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করছিলেন। কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে ধরতে রাখতে এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করছিলেন।
স্বজনদের নিয়ে এসেছেন জুড়ীর বাসিন্দা আল-আমীন। তিনি বলেন, মাধবকুণ্ড আমাদের এলাকায়ই। তবে সব সময় আসা হয় না। ঈদ উপলক্ষে আসা। অনেক ভালো লাগছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। সবাই আনন্দ করছে। আমাদের ভালো লাগছে। বর্ষার সময়। প্রকৃতিতে সবুজ ফিরেছে। তাই জলপ্রপাত ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য, খাসিয়া পুঞ্জি এবং চা বাগান মানুষকে আকৃষ্ট করছে বেশি।
ঢাকা থেকে মাধবকুণ্ড বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী পাবেল সরকার বলেন, ঈদে অবসর থাকায় ঘুরতে এসেছি। ভালো লাগছে। তবে পর্যটকদের জন্য এখানকার ব্যবস্থাপনাটা আরও ভালো করার দরকার। তাহলে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে।
পর্যটন এলাকায় ছবি তুলতে ব্যস্ত রহিম উদ্দিন নামের এক যুবক জানালেন, করোনার সময় দুই বছর ঈদের সময় মাধবকুণ্ড বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট হয়েছিলো। এবারের ঈদে কোনো বাঁধা নিষেধ নেই। তাই লোকজন আসছেন। এ রকম লোকজন আসা অব্যাহত থাকলে আমরা ছবি তুলে রোজগার করতে পারবো।
ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, করোনার সময় গত দুই বছরের ঈদে লোকজন ছিলেন না। আমাদের ব্যবসায় মন্দা ছিলো। এরপর বিধি নিষেধ উঠলে মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়া হয়। পর্যটকও আসেন। কিছুটা স্বস্তি ফিরে আমাদের মাঝে। এবার ঈদের দিন থেকে অনেক লোকজন আসছেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। গত দুই বছরে ঈদে বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছিলো, আশা করছি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবো।
মাধবকুণ্ড ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে। এছাড়া আমরা মাধবকুণ্ড ভ্রমণে আসা কিশোরদের মাদক সেবন, ইভটিজিং ও অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্যও সচেতন করেছি।
বনবিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত আনুমানিক ১০ হাজারের মতো পর্যটক ভেতরে প্রবেশ করেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও বনবিভাগ এবং ইজারাদের লোকজন কাজ করছে।