বড়লেখায় প্রথমবারের মতো একটি এলাকায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বছরে একটি ফসল হতো জমিতে। সেটি আমন। এছাড়া অন্য মৌসুমে জমি খালি পড়ে থাকতো। এই জমিতে চাষের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এরপর কৃষকদের কৃষি উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। চাষের পর শুরুর দিকে দেখা দেয় পানি সংকট। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সেই সংকটও উত্তরণ করেন কৃষকরা। সেচ সংকট কাটিয়ে প্রথমবারের মতো সমলয় পদ্ধতির চাষে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকসহ সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফুটেছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গজভাগ গ্রামের এই মাঠে গত ০৪ মে বিকেলে সমলয় পদ্ধতিতে আবাদ করা বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। কম্বাাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্য এই ধান কর্তনের উদ্বোধন করা হয়।
গজভাগ গ্রামের কৃষক আমির আলী জানালেন, প্রায় ১ একর জমিতে বোরো আবাদ করি সমলয় পদ্ধতিতে। ফলন ভালো হয়েছে। বোরো আবাদের পরপরই পানির সংকট দেখা দেয়। কৃষি বিভাগ অনেক কষ্ট করে পাহাড়ি এলাকা থেকে পানি এনে জমিতে দিয়েছে। পানির সংকট না থাকলে সমলয় পদ্ধতিতে ভালো ধান হবে। তারপরও যা হয়েছে আমরা খুশি। এই জমিতে আমরা এক ফসল চাষ করতাম। কৃষি বিভাগের কারণে আমরা তিন ফসল চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষক সূত্র জানায়, কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে গজভাগ গ্রামে ৫০ একর জমিতে একসাথে একই সময়ে চাষ ও একই সময়ে ফসল কাটার সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কৃষকরাও নতুন এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসেন। এই প্রকল্পে যুক্ত হন ৬৬ জন কৃষক। এই পদ্ধতিতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের হালিচারা ও সার প্রদান করে। গত ৩১ জানুয়ারি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকের মাঝে একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বিতরণ এবং রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হয়। এ প্রকল্পে কৃষি বিভাগের ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হয়।
আলাপকালে বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার জানান, ৫০ একরে বোরো বøক প্রদর্শনীতে প্রথমে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে রোপণ হয়েছিলো। চৈত্রের প্রথমদিকে খালের পানি কমে যাওয়ায় সেচকাজে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিলো। ৫০ একরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ধানে ১৩২ মেট্রিক টন। ধান কাটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। খাল খনন করে এই বছর প্রথম এখানে বোরো ফসল হয়েছে। আগে এখানে একটি ফসল হতো আমন। এবার প্রথম বোরো ফসল হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বোরোর পর আউশ চাষ করা হবে। এই ৬৬ জন কৃষককে প্রদর্শনী দিয়েছিলাম। তাদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আমরা বিনামূল্যে আউশের বীজ ও সার দিয়েছি। যাতে বোরো কর্তনের পরপরই জমি পতিত না রেখে তারা আউশ আবাদ করতে পারেন। কৃষি বিভাগ এক ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এলাকার কৃষকরাও আমাদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন।