এক পরিবারের আপত্তিতে ২৫০ পরিবার দুর্ভোগে, বড়লেখায় দেড়যুগ ধরে পড়ে আছে সেতু!
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণ গাংকুল গ্রামের একটিমাত্র স্বার্থান্বেষী পরিবারের আপত্তিতে সরকারের প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ দেড়যুগ ধরে পড়ে রয়েছে। আসছে না জনগণের কোনো উপকারে। নির্মিত ব্রিজের উভয়দিকের সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট করতে না দেওয়ায় অন্তত ২৫০টি পরিবার দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাঁধা প্রদানকারী পরিবারের সদস্যরা কয়েক বছর ধরে ওই ব্রিজের ওপর দোকানঘর তৈরি করে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও সরকারি কোনো স্থাপনা এভাবে ব্যবহারের নিয়ম নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর আগে তৎকালীন সরকার উপজেলার গাংকুল গ্রামকে আদর্শ গ্রাম ঘোষণা দিয়ে নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। দক্ষিণ গাংকুল ও খন্দকারটিলার সহস্রাধিক মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য দক্ষিণ গাংকুল গ্রামের অভ্যন্তরের রাস্তার সম্মুখে রেললাইন সংলগ্ন স্থানে এলজিইডি প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ব্রিজের সংযোগস্থলে মাটি ভরাটে গফুর আলী, হারু মিয়া সহোদররা আপত্তি করায় নবনির্মিত ব্রিজটি এলাকাবাসী ব্যবহার করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে লোকজন ব্রিজের পাশের নিচু স্থান দিয়ে যাতায়াত করছেন।
সরেজমিনে গেলে সাবেক ইউপি মেম্বার ইকবাল হোসেন জানান, কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী দক্ষিণ গাংকুল গ্রামের অভ্যন্তরীণ রাস্তার পশ্চিম প্রান্তে রেললাইন সংলগ্ন স্থানে ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে। কাজ শেষ হওয়ার পর এক পরিবারের আপত্তির কারণে ব্রিজটি চালু করা যায়নি। সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য টিআর বরাদ্দও আসে। কিন্ত গফুর আলী গংরা কাজ করতে দেয়নি। ফলে বরাদ্দ ফেরত যায়। মূলত গফুর আলী ও তৈয়ব আলীর ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে ব্রিজটি চালু করতে দেয়া হয়নি। আর এর শিকার হচ্ছেন গ্রামের ২৫০ পরিবার।
গ্রামের বাসিন্দা আরমান আমান, সফিক আহমদ, সাইদুল ইসলাম প্রমুখ জানান, ব্রিজের উভয় পাশে মাটি ভরাট করতে না দেওয়ায় প্রায় ১৮ বছর ধরে ব্রিজটি এলাকার মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। এর নিচ দিয়ে যাতায়াত করতে গ্রামবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি বছরে ৬-৭ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন বাধ্য হয়ে লোকজন ও শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ঘুরে বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। গফুর আলী, হারু মিয়া গংরা মাত্র ৮-১০ হাত জায়গায় মাটি ভরাট করতে না দেওয়ায় সহস্রাধিক মানুষ সরকারের এ ব্রিজ নির্মাণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ব্রিজের বিরোধিতাকারীর ছেলে জয়নুল ইসলাম প্রায় ৭ বছর ধরে ব্রিজের উপর দোকান তৈরি করে ব্যবসা করছে। তারা সরকারি স্থাপনার উপর থেকে দখলদার ব্যক্তিকে উচ্ছেদ ও বিজ্রটি চলাচল উপযোগী করার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।
ব্রিজের সংযোগ সড়ক তৈরিতে আপত্তিকারী গফুর আলীর ভাতিজা জয়নুল ইসলাম ব্রিজের ওপর দোকানঘর তৈরি করে ব্যবসা করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রিজটি আরও কয়েক হাত দক্ষিণ দিকে সরিয়ে তৈরির কথা ছিলো। এখানে নির্মাণ করায় তাদের কিছু জমি নষ্ট হয়ে যাবে তাই ব্রিজের উভয় পাশে মাটি ভরাট করতে দেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী প্রিতম সিকদার জয় জানান, সরকারি অর্থায়নে নির্মিত বিজ্র কারও বাঁধায় অকেজোভাবে পড়ে থাকা খুবই দুঃখজনক। আপত্তি থাকলে নির্মাণ করতে দিলেন কেনো। এছাড়া সরকারি কোনো স্থাপনার ওপর দোকানঘর তৈরিরও নিয়ম নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।