‘আমেরিকার গভর্নর’ অ্যান্ড্রু কুমো!
২০০১ সালের নাইন-ইলেভেনের ঘটনা নিউইয়র্কের মেয়র রুডি জুলিয়ানিকে নায়ক বানিয়েছিল। বিপর্যস্ত নিউইয়র্ক নগরী সামাল দিয়ে জুলিয়ানি মানুষের কাছে খেতাব পেয়েছিলেন ‘আমেরিকার মেয়র’ হিসেবে। এবার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জনগণের কাছে ‘আমেরিকার গভর্নর’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন।
রাজ্যে প্রতিমুহূর্তে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত, মৃত্যু ও লকডাউনের মধ্যেও নানা পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের জন্য প্রতিদিন মাঠে আছেন গভর্নর কুমো। এ রাজ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ফেডারেল সহযোগিতার জন্য শুরু থেকেই দেনদরবার করছেন কুমো। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যখন পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর নেই, মাস্ক নেই, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে স্পষ্ট বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন কুমো। ট্রাম্পও বসে থাকেননি। যে নিউইয়র্কে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, সেই রাজ্যের গভর্নরকে একহাত নিতে পিছপা হননি ট্রাম্প। দমে যাননি কুমোও। জনগণের দাবি এতই প্রকট হয়ে উঠেছিল যে ট্রাম্প নিজেও এড়িয়ে যেতে পারেননি বাস্তবতা। তাই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে কুমোকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, নিউইয়র্কের জনগণের পাশে থাকবেন ট্রাম্প। এভাবেই নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো করোনা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে গিয়ে জনগণের কাছে ‘আমেরিকার গভর্নর’ হিসেবে বেশ আলোচিত হচ্ছেন।
এদিকে সিনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককলেনের কড়া সমালোচনা করেছেন নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর কুমো। সিনেটর মিচ ম্যাককনেল নিউইয়র্কের মতো ডেমোক্রেট প্রধান রাজ্যের উল্লেখ করে ‘ব্লু স্টেট বেইল আউট’ না করার কথা বলেছেন। তিনি বলে, রাজ্যগুলো দেনার দায়ে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে।
করোনা সংকটে নিউইয়র্ক অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। দুই মাস থেকে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ আছে। রাজস্ব সংকট দেখা দিয়েছে। ফেডারেল সাহায্য ছাড়া নিউইয়র্ক রাজ্য হিসেবে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এ কারণে রাজ্য গভর্নর ফেডারেল সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন । নিজে ওয়াশিংটনে গিয়ে দেখা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। ট্রাম্প কথা দিয়েছেন, নিউইয়র্কে সাহায্য করা হবে। এতেই সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বাগড়া দিচ্ছেন। কংগ্রেসে রিপাবলিকান সদস্যরা নিউইয়র্কের মতো রাজ্যে তাঁদের ভোট ব্যাংক নেই বলে সহযোগিতা দিতে গড়িমসি করছেন।
এ প্রসঙ্গে ২৯ এপ্রিল কুমো বলেছেন, নিউইয়র্ক রাজ্য প্রতি বছর তাঁদের ‘বেইল আউট’ করে আসছে। প্রতিবছর ফেডারেল সরকারকে ২৯ বিলিয়ন ডলার করে দিয়ে আসছে নিউইয়র্ক।
আজকে যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখনো রাজনীতি করছেন মিচ। মৌলিক কারণেই বিষয়টি চরম বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। এখন রাজনীতি বন্ধ রেখে মানুষ বাঁচানোর কাজ করাই আমেরিকার ভাবাদর্শ বলে উল্লেখ করেছেন কুমো।
এদিকে নিউইয়র্ক গভর্নরের সমালোচনার পর মিচ ম্যাককনেল ২৯ এপ্রিল রাতে তাঁর মনোভাব পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন। কংগ্রেসের পরবর্তী করোনা রিলিফ প্রস্তাবে রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে তিনি বলেছেন।