জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ টরন্টো কানাডা ও প্রবাসীদের পক্ষে বাংলাদেশে ত্রাণ কার্জক্রম
জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ টরন্টো কানাডা ও প্রবাসীদের পক্ষে বাংলাদেশে ত্রাণ কার্জক্রম
ভয়ংকর করোনা ভাইরাসের থাবায় থমকে আছে গোটা পৃথিবী, সেইসাথে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের জনসাধারণ। ইতিমধ্যে খবরে প্রকাশ যে, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পয়তাল্লিশ জন।
আরো মর্মান্তিক বিষয় হলো ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে কমপক্ষে ছয়জন।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সংখ্যা অনেক এবং শ্রেণীবিন্যাসে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের সংখ্যাই অধিক।
সরকারপক্ষ, রাজনীতিবিদ কিংবা ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য বিভিন্নসূত্রে বিতরণকৃত ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় হয়তো অপ্রতুল। তাছাড়া মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অনেকেই আত্মসম্মান রক্ষার্থে ঐসকল ত্রাণ গ্রহন করতে সাধারণত ঘর থেকে বের হন না। শিক্ষিত ভদ্র পরিবারের সন্তান সহ বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ছোটখাটো ব্যবসা অথবা চাকরি করে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে কোনরকম নিজের সংসার টানাপোড়নের মধ্যদিয়ে চালিয়ে নিয়ে যান। এদের মধ্যে আছেন ফুটপাতে রকমারী সামগ্রী বিক্রেতা, ফলমূল-সবজি বিক্রেতা, ছোটখাটো ব্যবসায়ী এবং আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র আলেমসমাজ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা।
দেশ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত লকডাউনের কারণে আমাদের দেশের চাকরিজীবী এবং ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, চাকরিজীবিদের বেতন বন্ধ। মাদ্রাসা শিক্ষক এবং অন্যান্য ধর্মীয় শিক্ষকদের অবস্থা আরো করুণ।
কিন্তু সামাজিক দিক থেকে এরা সবাই আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন মানুষ। এতদিন এরা সবাই নিজে থেকেই সংসারের সকলের ভরণপোষণের দায়িত্ব সামলেছেন; এরা সবাই আমাদের সমাজে শ্রদ্ধার পাত্র।
কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমানের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আত্মসম্মান রক্ষা করাটাই দায়। একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ যখন ত্রাণ অথবা সহায়তা আনতে কারো কাছে যান, মুহূর্তের মধ্যেই সে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে! এ বিষয়টি যে কোন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য চরম বিব্রতকর এবং নিঃসন্দেহে তার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং সর্বোপরি তার সন্তানদের সামনে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য চরম লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এমন একটি পোস্ট দিয়েছে চট্টগ্রামের জনৈক এক ব্যক্তি, যার বাবা ঘরে খাবার নেই বলে চুপিসারে সাহায্য আনতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু খাবার নিয়ে বাবা ঘরে আসার পূর্বেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছেলে দেখতে পায় তার বাবা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করছে….. এবং বলাইবাহুল্য, ছেলে লজ্জায় বিমূঢ় হয়ে গেছে এই চিত্রটি দেখে।
এজন্য এসব বিষয় মাথায় রেখে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ টরেন্টো কানাডা এবং সেইসাথে কানাডা প্রবাসী অনেকে আর্তমানবতার সেবায় বিশেষত আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি, পরিবার, দ্বীনদার ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের কাছে ঘরে ঘরে নীরবে-নিভৃতে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছেন।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ টরেন্টো, কানাডা এবং কানাডা প্রবাসীদের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার অনুদান বিতরণ করা হয়েছে।
অনুদানের একাংশ দ্বীনদার, মাদ্রাসা শিক্ষক এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অনুদানের আরেক অংশ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন অনেক পরিবারের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অনুদানের একাংশের মাধ্যমে পবিত্র রমজানুল মোবারকে মানুষের খাদ্য সহায়তা, ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য চাল, ডাল তেল সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ক্রয় করে রাখা হয়েছে, যেসব সামগ্রী রমজানের শুরুতেই বিতরণ করা হবে ইনশআল্লাহ্।
এ মহতী কার্যক্রমে সহায়তার হাত প্রসারিত করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হচ্ছে।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন অফ টরেন্টো, কানাডার কার্যকরী পরিষদের পক্ষ থেকে উক্ত কার্যক্রমে সহায়তাকারী সকলকে জানানো হচ্ছে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।